আর-রহমান ফাউন্ডেশন
আর-রহমান ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক শিক্ষা, দাওয়াহ ও পূর্ণত মানবকল্যাণে নিবেদিত সেবামূলক সরকার-নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। নিবন্ধন নম্বর: এস-১৩১১১/২০১৯। ২০১৭ সালে শায়খ আহমাদুল্লাহ এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করছেন। এই প্রতিষ্ঠান মানবতার শিক্ষক, মানুষের মুক্তি ও শান্তির দূত, মানবসেবার আদর্শ, মহানবী মুহাম্মদ সা.-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আর্তমানবতার সেবা, সমাজ-সংস্কার, মহোত্তম নীতিচেতনার সঞ্চার, পরিচ্ছন্ন মানসিকতা গঠনে নিরন্তর নানা কর্মসূচি পালন, সর্বোপরি একটি আদর্শ কল্যাণসমাজ বিনির্মাণে যথাশক্তি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন ও সমাজ গঠন করা এবং বিশুদ্ধ ইলমের প্রচার ও বিস্তার আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের অন্যতম লক্ষ্য। সালফে সালিহীনের পথ ধরে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা আমাদের নীতি।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
রাসূলুল্লাহ (সাল্লালহু আলইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবনাদর্শের আলোকে
(ক) দেশজুড়ে, বিশেষত সমাজের তুলনামূলক উপেক্ষিত অংশে প্রাতিষ্ঠানিক ও উপ-প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইসলামী ও সাধারণ শিক্ষা-দীক্ষা ও কর্মমুখী বৈষয়িক প্রশিক্ষণের উদ্যোগ
(খ) আর্তমানবতার সেবা এবং
(গ) সৎকাজে উৎসাহ দান ও অসৎকাজ নিবারণে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য।
কার্যক্রম
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন প্রধানত তিনটি সেক্টরে কাজ করে— শিক্ষা, সেবা ও দা’ওয়াহ।
শিক্ষা কার্যক্রম সমূহ
প্রাজ্ঞ আলেম ও নিবেদিতপ্রাণ দা‘য়ী ইলাল্লাহ গড়ে তুলতে কুরআন-সুন্নাহর মৌলিক শিক্ষা সম্বলিত আধুনিক যুগোপযোগী পাঠক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং মাদরাসা প্রতিষ্ঠা।
শিক্ষা, সংস্কৃতি ও নানা সামাজিক ও জীবনমুখি বিষয়ের ওপর প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা।
উচ্চতর ইলমী গবেষণাকেন্দ্র।
কর্মজীবী নর-নারীর জন্য বিভিন্ন মেয়াদী ইসলামশিক্ষা কোর্সের আয়োজন।
আস-সুন্নাহর চেতনাকে কেন্দ্রে রেখে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা।
প্রাক প্রাথমিক স্তরে বুনিয়াদি শিক্ষা বিস্তারে সবাহী মকতব প্রতিষ্ঠা।
অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া রোধে পড়া-লেখা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ যোগানো।
সেবা কার্যক্রম
বেকারত্ব দূরীকরণে ও দারিদ্র্য বিমোচনে হস্তশিল্প, যন্ত্রশিল্প, কারিগরি, খামার ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীলতার জন্য অর্থ সহায়তা প্রদান।
সময়ে সময়ে এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগকালে উপদ্রুত অঞ্চলে ত্রাণ-সহায়তা প্রদান।
চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে অক্ষম রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা।
অব্যবহৃত ওষুধ সংগ্রহ করে বিভিন্ন বুথের মাধ্যমে দুঃস্থ রোগীদের মাঝে সরবারহ করা।
রামাদান মাসে অভাবগ্রস্তদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ ও দা’ওয়াহ এর আয়োজন।
দুঃস্থদের মধ্যে ঈদ উপলক্ষে ফিতরা, পোশাক ও ঈদ-সামগ্রী বিতরণ।
সচ্ছলদের পক্ষ হতে কুরবানীর আয়োজন করে দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ।
দুঃস্থদের মধ্যে রিকশা, সেলাই মেশিন ইত্যাদি উপার্জন উপকরণ বিতরণ।
সুপেয় পানির সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় নলকূপ ও জলাধার স্থাপন।
পরিবেশ সুরক্ষা ও স্বাবলম্বীকরণের লক্ষ্যে অভাবী পরিবার ও আবাসিক মাদরাসার আঙিনায় অধিক ফলনশীন বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আত্মনির্ভরশীল করার জন্য নানামুখী প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান।
পথশিশু ও প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতা ও পুনর্বাসন করা।
বিধবাদের ব্যয়ভার গ্রহণ ও এতিমদের পরিণত হয়ে ওঠা অবধি অভিভাবকের দায়িত্ব গ্রহণপূর্বক শিক্ষাদান ও প্রতিপালন।
দা‘ওয়াহ কার্যক্রম সমূহ
শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর সমাজ গঠনে সহায়ক আদর্শ মসজিদ নির্মাণ ও পরিচালনা।
বিষয় বিশেষে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকার মসজিদ, মাদরাসা, জেলা অডিটরিয়াম, উপজেলা পরিষদ মিলনায়াতন, মাঠ প্রভৃতি সমাগমস্থলে সাপ্তাহিক, মাসিক, বার্ষিক ও উপলক্ষ-সাময়িক ওয়ায মাহফিল, মুক্ত মতবিনিময় এবং আলোচনাসভা আয়োজন।
বিশুদ্ধ ইসলামিক জ্ঞান, আকীদা, কর্মনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে মৌলিক ও প্রমাণ্য বইপত্র প্রকাশ ও প্রচার।
শিরক-বিদ‘আত, প্রান্তিকতা ও উগ্রপন্থা নির্মূলে উদ্যোগ গ্রহণ।
বিষয়ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠানের তথ্যচিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার।
অমুসলিমদের উদ্দেশ্যে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও সৌন্দর্য তুলে ধরে বই রচনা, অনুবাদ, প্রকাশ ও প্রচার।
ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণ ও অপসংস্কৃতি প্রতিরোধে নানামুখি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ফ্যামিলি কাউন্সেলিং বিভাগ পরিচালনা।
দীনি জিজ্ঞাসা ও পরামর্শের জন্য উন্মুক্ত ‘কল সেন্টার’ স্থাপন।
মুসলিম ইয়ুথ ক্লাব প্রতিষ্ঠা।
ইমাম ও খতীবদের জন্য দা‘ওয়াহ প্রশিক্ষণ।
শিশু-কিশোরদের ইসলামী সংস্কৃতিকেন্দ্র নির্মান।
পাঠাগার প্রতিষ্ঠা।
শরয়ী সমাধান বিভাগ।
শিক্ষা
প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও যুগোপযোগী দা‘য়ী তৈরির লক্ষ্যে সাধারণ ও দীনি শিক্ষার সমন্বিত সিলেবাসের মাদরাসা শুরু করেছে ফাউন্ডেশন। এই মাদরাসার কাঠামো এরকমভাবে গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছার পর প্রয়োজনীয় দীনি জ্ঞান অর্জিত হয়ে যায়। এর পর শিক্ষার্থী পুরোপুরি সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ভর্তি হতে পারবে, চাইলে মাদরাসায় উচ্চতর পড়াশোনাও অব্যাহত রাখতে পারবে। ফাউন্ডেশন পর্যায়ক্রমে ইসলামিক স্কুল ও কলেজ স্থাপনের কাজও আরম্ভ করবে ইন-শা-আল্লাহ।
প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও যুগোপযোগী দা‘য়ী তৈরির লক্ষ্যে সাধারণ ও দীনি শিক্ষার সমন্বিত সিলেবাসের মাদরাসা শুরু করেছে ফাউন্ডেশন। এই মাদরাসার কাঠামো এরকমভাবে গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছার পর প্রয়োজনীয় দীনি জ্ঞান অর্জিত হয়ে যায়। এর পর শিক্ষার্থী পুরোপুরি সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ভর্তি হতে পারবে, চাইলে মাদরাসায় উচ্চতর পড়াশোনাও অব্যাহত রাখতে পারবে। ফাউন্ডেশন পর্যায়ক্রমে ইসলামিক স্কুল ও কলেজ স্থাপনের কাজও আরম্ভ করবে ইন-শা-আল্লাহ।
দাওয়াহ
মহান আল্লাহর অনুগ্রহে মাত্র দুই বছরে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন বাংলাভাষীদের মাঝে অনলাইন ও অফলাইন দাওয়াহ এবং বিশুদ্ধ দীন প্রচারে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ফাউন্ডেশনের ভেরিফাইড ইউটিউব চ্যানেল ও ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে বিভিন্ন দীনী বিষয়ে সহস্রাধিক এইচডি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। যা থেকে কোটি কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছেন। সাধারণ মানুষের দীনি জিজ্ঞাসার উত্তর দেওয়ার জন্য আমাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে ‘শরয়ী সমাধান’ শিরোনামে ধারাবাহিক সাপ্তাহিক লাইভ প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। ঘণ্টাব্যাপী আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটির এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ পর্ব সম্প্রচারিত হয়েছে।
“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সকাল সন্ধ্যার দু’আ ও যিকর” নামে একটি বই এবং “পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পরবর্তী মাসনূন দু’আ ও যিকর” নামে একটি পকেট কার্ড দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক কপি বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ২৮ হাজার কপি ‘রামাদ্বান প্ল্যানার’ বিতরণ করা হয়েছে।
সেবা
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ফাউন্ডেশন যেসব সেবামূলক কাজ করেছে, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
সবার জন্য কুরবানী: সচ্ছলদের পক্ষ থেকে ৬২৯টি গরু/ছাগল কুরবানী করে ১৬,১৯৩টি দুস্থ পরিবারের মাঝে গোশত বিতরণ করা হয়েছে।
করোনাকালীন সময়ে: ১০০৩ জন উবার রাইডার এবং ৩০০ সিএনজি চালককে ১ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা করা হয়েছে। কোভিড-১৯-এ পুঁজি হারানো ৫০জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে ১টি করে ভ্যান ও নগদ ৫ হাজার টাকা পুঁজি প্রদান করা হয়েছে এবং ১০০জন নারীকে ব্লক-বাটিক প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ৪ হাজার পরিবারের মধ্যে এক মাসের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
বন্যায় ত্রাণ বিতরণ: উত্তরবঙ্গের বন্যা-কবলিত বিভিন্ন জেলার ১৫০০-এরও বেশি পানিবন্দি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ এবং ১৫০ পরিবার ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন মসজিদ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বন্যায় অনাহারে-অর্ধাহারে কাটানো গবাদি পশুর মালিকদের মাঝে খৈল ও ভূসি বিতরণ করা হয়েছে। বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি থানার সুজনের পাড়া চরে বন্যায় ভিটেহারাদের ৩০টি ঘর এবং ১৬টি টয়লেট ও ১৬টি টিউবওয়েল স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে।
ইফতার বিতরণ: দেশব্যাপী ১০৫,৫৮৫ জন রোযাদারের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
শীতবস্ত্র বিতরণ: দেশব্যাপী ২৩,২৮০ জন শীতার্তের মঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
খাদ্য সামগ্রী বিতরণ: দারিদ্র্য পীড়িত কয়েকটি জেলায় ১২৫০ টি দুস্থ পরিবারের মাঝে ১২,৫০০ কেজি চাল বিতরণ বিতরণ করা হয়েছে।
নলকূপ স্থাপন: এ পর্যন্ত দেশজুড়ে প্রত্যন্ত এলাকায় ১১২টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
ইয়াতীম ও বিধবা স্পন্সর: বিভিন্ন স্পন্সরগণের মাধ্যমে ২১জন ইয়াতীমের ভরণ-পোষণ এবং পড়াশোনাসহ যাবতীয় দায়িত্বভার গ্রহণ করছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন।
বৃক্ষরোপণ: পরিবেশ সুরক্ষা এবং স্বল্প আয়ের লোকদের স্বাবলম্বীকরণে ও সদাকায়ে জারিয়ার উদ্দেশ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আবাসিক মাদরাসা ও অভাবী মানুষের বাড়ির আঙিনায় অধিক ফলনশীল ৬৫,৭৯২টি বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে